বীরভূম: লাল মাটির জেলা বীরভূমে যে কটি বনেদি প্রাচীন জমিদার বাড়ির পুজো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সুরুল জমিদার সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজো পালিত হচ্ছে সুরুল জমিদার সরকার বাড়িতে। এই পুজোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল প্রতিমার মুখ ছাঁচে নয়। শিল্পী তাঁর নিজ হাতে গড়ে তোলেন মায়ের মূর্তি। প্রায় চার পুরুষ ধরে বীরভূমের খয়রাশোলের বাসিন্দা সুভাষ সূত্রধর সরকার বাড়ির প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন৷ ৩০০ বছরের পুরনো গহনায় প্রতিমাকে সাজিয়ে তোলেন সরকার পরিবারের সদস্যরা৷ পুজোয় দোলায় করে ঘট ভরার প্রথাও রয়েছে৷ এছাড়াও চালকুমড়ো, আখ ও ছাগ বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে৷ ছাঁচে নয়!
বর্ধমান জেলার নীলপুর গ্রাম থেকে বীরভূমের বোলপুরের সুরুল গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন ভরতচন্দ্র ঘোষ। তাঁর সরকার পদবি ব্রিটিশ প্রদত্ত। তাঁকে সরকার বাড়ির ‘প্রাণ পুরুষ’ বলা হত। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয় জমিদারিত্ব। ভরতচন্দ্র ঘোষের পুত্র কৃষ্ণহরি সরকার জমিদার বাড়ির অন্দরেই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন৷ সেইসময় ছিল মাটির তৈরি মন্দির৷ পরবর্তীতে কংক্রিটের মন্দির, সুসজ্জিত নাটমন্দির নির্মাণ করা হয়।
আরও পড়ুন: বাবার স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়ে চলছে মূর্তি গড়ার কাজ
আজও চিরাচরিত জমিদারী প্রথা মেনেই পুজো হয়৷ এই জমিদার বাড়ির পুজোর মূল আকর্ষণ হল বড় পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান। জমিদার বাড়ির বিরাট বিরাট থাম, ঐতিহ্যবাহী জানালা-দরজা, সিংহদুয়ার দেখার মতো। এছাড়া পুজোর সময়ে বেলজিয়াম থেকে আনা ঝাড়বাতি রেরের তেল দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়।
সুরুল সরকার বাড়ির সদস্য শিবপ্রসাদ সরকার বলেন, “আমাদের পুজো বৈষ্ণব মতে হয়৷ কিন্তু বলি প্রথা আছে৷ আগে এই মন্দির মাটির ছিল। পরে কংক্রিটের নাটমন্দির তৈরি হয় ১৮ হাজার টাকার বিনিময়ে। পুজোর চারদিন সরকার পরিবারের সকলে যে যেখানেই থাকেন বাড়িতে আসেন ৷ আমাদের পুজোর প্রথা প্রথম দিন থেকে আজও একই।”
মৃৎশিল্পী সুভাষ সূত্রধর বলেন, “আমরা চার পুরুষ ধরে সুরুল জমিদার বাড়ির প্রতিমা নির্মাণ করে আসছি। এখানে হাতে করে দেবীর মুখ বানাতে হয়৷ ছাঁচে নয়। এমনকি, চালচিত্র হাতে আঁকতে হয়, পটচিত্র বসিয়ে দিলেই হয় না। অন্য পুজোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই পুজো।
দেখুন অন্য খবর